বাজারে কাঁচা টমেটো বিক্রি করতে শুরু করেছেন গোদাগাড়ী কৃষকরা। প্রতিমণ কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে। আগাম হাইব্রিড জাতের এসব টমেটো চাষে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। ফলে এই উপজেলায় প্রতিবছর বাড়ছে টমেটোর চাষ। রাজশাহীর উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টমেটোর চাষবাদ হয় গোদাগাড়ীতে। অনুকূল আবহাওয়া ও বিপণন ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকদের টমেটোর চাষে আগ্রহ বেশি। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এবছর রাজশাহী জেলায় টমেটোর চারা বপন চলমান রয়েছে। চারা লাগানোর মৌসুম শেষে মোট টমেটো চাষের চিত্র জানা যাবে। তবে বর্তমানে জেলায় আড়াই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গোদাগাড়ীতে টমেটোর চাষ হয়েছে ২ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। রাজশাহী জেলায় ২০২৩ সালে টমেটোর চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু গোদাগাড়ীতে টমেটোর চাষ হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। যা উপজেলার হিসেবে সিংহভাগ। একই অবস্থা চলতি বছরও। এছাড়া ২০২২ মৌসুমে ৩ হাজার ১৫ হেক্টর ও ২০২১ মৌসুমে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছিল জেলাজুড়ে।
গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়নের টমেটো চাষিদের দাবি, এখন টমেটোর বাজার ভালো। নতুন সবজি হিসেবে বাজারে চাহিদা প্রচুর। তাই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা (অপরিপক্ক) টমেটো ব্যবসায়ীরা জমি থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কৃষকের বাড়তি কোন খরচ নেই। গত সপ্তাহ থেকে টমেটো বিক্রি শুরু হলেও শুক্রবার (২২ নভেম্বর) কৃষকের জমিতে প্রকারভেদে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে কেনাবেচা হয়েছে টমেটো। সেই হিসেবে প্রতি কেজি টমেটোর দাম পড়ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
টমেটো ব্যবসায়ী শামসুল আলম বাবু বলেন, টমেটো কেনা বেচা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু টমেটো স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বেশি টমেটো হলে অনেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের বাজারে সরবরাহ করছেন। এখনও পুরো দমে টমেটো কৃষকের জমি থেকে উঠতে শুরু করেনি। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, জেলার মধ্যে গোদাগাড়ীতে সবচেয়ে বেশি টমেটোর চাষ ও উৎপাদন হয়। তাই স্থানীয়ভাবে গোদাগাড়ীকে ‘টমেটোর রাজ্য’ বলা হয়। সাধারণত আউশ ধান কেটে নেওয়ার পরে কৃষকরা জমি প্রস্তুত শেষে টমেটো চাষ শুরু করে। এই উপজেলায় ১৭ থেকে ২০ জাতের টমেটোর চাষবাদ হয়। যার মধ্যে বেশির ভাগ হাইব্রিড জাতের। তবে অন্য যেকোনো মাঠ ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বেশি। এই উপজেলায় টমেটো বিক্রির সঙ্গে সরাসরি কৃষকরা জড়িত। ফলে কৃষকদের কাছে দিন দিন অর্থকরী ফসল হিসেবে রূপ নিয়েছে টমেটো। এছাড়া টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ীভাবে দুই থেকে আড়াই মাসের জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়।
গোদাগাড়ী উপজেলার প্রোগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রাকিব বলেন, গেল ৭ থেকে ৮ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে টমেটোর চাষ হচ্ছে। টমেটো চাষের পর বিক্রি করার সুবিধা ভালো। ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই টমেটো কিনে নিয়ে যায়। কৃষককে টমেটো হাটে নিয়ে যেতে হয় না। এতে অনেক টাকা ও সময় বাঁচে কৃষকের। আরেক চাষি শ্রী বলরাম কর্মকার বলেন, কৃষকরা এবছর গাছে তুলনামূলক টমেটো কম। টমেটোর তেমন ভালো ফলন হয়নি। তবে বাজারে নতুন সবজি হিসেবে দাম ভালো আছে। সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে টমেটোর উৎপাদন ধরা হয় প্রায় ২৫ টন। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহ থেকে কাঁচা টমেটো বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে টমেটো। এখন ভালো দাম রয়েছে বাজারে। এবছর গতবছরের তুলনায় ৪৩৫ হেক্টর বেশি জমিতে টমেটোর চাষ বেড়েছে। এবছর ২ হাজার ৬৭০ হেক্টর ও গতবছর ২ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটা অতিক্রম করেছে। এখনও জমিতে কৃষকরা টমেটোর চারা বপণ করছেন। টমেটো চাষের জমি আরও বাড়বে। এই উপজেলায় ২ হাজারের বেশি কৃষক টমেটো চাষের সঙ্গে জড়িত। এবছর পোকামকড়ের উপদ্রব তেমন ছিল না। তাই টমেটোর ভালো ফলন হয়েছে।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।