ঢাকাশুক্রবার , ১৬ অক্টোবর ২০২০
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আপন আলোয় উদ্ভাসিত
  6. আরো
  7. এক্সক্লুসিভ
  8. কবিতা
  9. কৃষি ও প্রকৃতি
  10. খুলনা
  11. খেলাধুলা
  12. গণমাধ্যম
  13. চট্টগ্রাম
  14. চাকুরি
  15. চাঁদপুর জেলার খবর

“পৃথিবীর ছাদ” খ্যাত পামীর মালভূমির কথা!

সংবাদ
অক্টোবর ১৬, ২০২০ ৬:২৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আমাদের এ পৃথিবীর এক বিশেষ ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মালভূমি। সাধারণত যে বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগ সমুদ্র সমতল থেকে বেশ উঁচপ্রায় ৩০০ মিটার, অথচ যার পৃষ্ঠদেশ বা উপরিভাগ খুব অসমতল নয় এবং চারপাশ খাড়া ঢালযুক্ত থাকে তাকে মালভূমি বলা হয়।

মধ্য এশিয়াতে অবস্থিত এমনই এক মালভূমি পামীর মালভূমি যা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু এবং সবচেয়ে বড় মালভূমি হিসেবে পরিচিত।

পামীর মালভূমি সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে প্রথমেই আরও একবার বলে নেই মালভূমি কাকে বলে। সাধারণ ভাষায় মালভূমি হলও এক বা একাধিক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত সমতল অঞ্চল। অর্থাৎ কয়েকটি পাহাড়ের সম্মলিত স্থানে যে সমতল অঞ্চল তৈরি হয় তাই মালভূমি। মালভূমিকে অনেক সময় “টেবিল ল্যান্ড” হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয় কারণ মালভূমি দেখতে অনেকটা টেবিলের মতো অর্থাৎ এর ওপরটা প্রায় সমতল এবং চারিদিক খাড়া ঢালযুক্ত।

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মালভূমির নাম পামীর মালভূমি। স্থানীয় ভাষায় এর উচ্চারণ হচ্ছে “পমির”। যার অর্থ হচ্ছে সূর্যের পা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পামীর মালভূমির উচ্চতা হচ্ছে প্রায় ১৬,০০০ ফুটের মতো। মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত পামির পর্বতমালাকে ঘিরে এ মালভূমিটির অবস্থান। তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তিব্বত, চীন এবং পাকিস্তানের কিছু অংশ পর্যন্ত এ মালভূমিটি বিস্তৃত। এ অঞ্চলটি মূলত বিভিন্ন উঁচু পর্বতের মিলনস্থল। পৃথিবীর সর্বোচ্চ কয়েকটি পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এটি এ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মালভূমি হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। শুধু পৃথিবীর সর্বোচ্চই নয় তিব্বত মালভূমির সাথে সম্মিলিতভাবে পামির পর্বতশ্রেণীর সংলগ্ন মালভূমিটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মালভূমি অঞ্চল। এ কারণে তাই পামীর মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ বা “Roof of the earth”-বলা হয়।

পামীর মালভূমির চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বহু উঁচু-নিচু পর্বতশ্রেণী। এর উত্তর দিকে রয়েছে তিয়েনশান পর্বতমালা, পূর্ব দিকে রয়েছে কুনলুন পর্বতশ্রেণী, দক্ষিণ-পশ্চিমে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণী এবং দক্ষিণে রয়েছে হিমালয় পর্বতমালা ও হিন্দুকুশ পর্বতশ্রেণী। পামীর মালভূমি মূলতঃ কুনলুনের শাখা আনতিনতাগ, তিয়েনশানের তারিম মালভূমি ও হিমালয়ের মধ্যভাগে অবস্থিত।

বছরের অধিকাংশ সময় এ জায়গাটি তুষারাবৃত থাকে। এ স্থানে প্রত্যেক বছর গড়ে প্রায় পাঁচ ইঞ্চির মতো তুষারপাত হয়। তবে প্রত্যেক বছর স্বল্প সময়ের জন্য এ অঞ্চলে অত্যন্ত চমৎকার অবয়বে গ্রীষ্মকাল দেখা যায় যা এখানকার আধিবাসীদের জীবন এবং জীবিকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রীষ্মকালে এ বিস্তীর্ণ অঞ্চল তৃণ আচ্ছাদিত থাকে। এ সময়টিতে তাই এ অঞ্চলটি তৃণ চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা তাঁদের গবাদি পশু পালনের জন্য এ স্বল্পস্থায়ী গ্রীষ্মকালের জন্য অতিমাত্রায় নির্ভরশীল।

পামীর মালভূমির পশ্চিম প্রান্তে সাম্প্রতিককালে কয়লাখনি আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৯৮০ সালের দিকে এখানে ক্লিনোহিউমাইট নামক এক ধরনের রত্ন পাথরের সন্ধান মেলে।

পামীর মালভূমির দক্ষিণ-পূর্ব পাশ ঘেঁষে রয়েছে চায়না-কারাকোরাম হাইওয়ে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু হাইওয়ে। এর মাধ্যমে চীন এবং পাকিস্তানের সংযুক্তি ঘটেছে। এছাড়াও এ অঞ্চলে রয়েছে পামীর হাইওয়ে যা পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম হাইওয়ে। পামীর হাইওয়ে তাজিকিস্তানের দুশানব থেকে কিরগিজস্তানের ওশে যাওয়ার পথ রচনা করেছে। প্রাচীন কালের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক পথ সিল্ক রোড পামীর পর্বতমালাকে অতিক্রম করেছে। অতীত কালে বিশ্ববাণিজ্য পরিচালনার জন্য এ সিল্ক রোড অত্যন্ত বিখ্যাত ছিলও। এ রাস্তাটি চীনের প্রাচীন রাজধানী জিয়ান থেকে পামীর পর্বতমালার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে জিনজিয়াং রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর কাশগড়কে সংযুক্ত করেছে।

জিনজিয়াং অঞ্চলের একজন বিখ্যাত আলেম ছিলেন আল্লামা কাশগরী যিনি জিনজিয়াং এর কাশগর থেকে ভারতে এসেছিলেন। পড়াশোনা শেষে ভারতেই থেকে যান। পাকিস্তান হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। শেষ বয়সে খুব আগ্রহী ছিলেন নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি। ঢাকাতেই ইন্তেকাল করেন। সৈয়দ আলী আহসান তাঁর আত্মজীবনীতে তাঁকে নিয়ে অনেক স্মৃতিচারণ করেছেন। পুরাতন ঢাকার বকশিবাজারে অবস্থিত সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার পূর্ব দিকের হলটির নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে যেটি “আল্লামা কাশগরী (রহঃ) হল’’নামে পরিচিত।

বিভিন্ন সময়ে সিল্ক রোডের দখল নিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ হয়েছে। পামীর মালভূমি অঞ্চলে একাধিকবার সামরিক ঘাঁটি স্থাপন কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণকে ঘিরেও বিভিন্ন বিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে চীন তাদের দ্বন্দ্ব অনেকখানি মিটিয়ে ফেলেছে। ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষত দিনে মধ্য এশীয় অঞ্চলগুলোতে রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ পামীর মালভূমি অঞ্চলটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।

%d bloggers like this: