মাদক যেনো চাঁদপুরকে গ্রাস করে ফেলেছে। ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মাদক। হাত বাড়ালেই ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল পাওয়া যায়। অথচ হাতেগোনা কয়েকজন মাদক কারবারি। এরা কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করে না। নানা কৌশল অবলম্বন করে এরা সবসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। চাঁদপুর শহরের মাদক নিয়ন্ত্রণ করে চারজন মাদকের ডিলার। আর পুরো সদর উপজেলায় মাদক ক্রয়-বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করে আরো চারজন ডিলার। শহর এবং সদরসহ মোট ৮জনের হাতে পুরো মাদক ব্যবসা। এদের আবার সাব ডিলার বা বিক্রেতা রয়েছে। তারা খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে মাদকসেবীর হাতে কাক্সিক্ষত মাদক পৌঁছে দেয়। যাদেরকে সাপ্লাইয়ার বলা হয়। চাঁদপুর শহরের যে চারজন ডিলার তারা পুরো শহরে মাদক সাপ্লাই দিয়ে থাকে। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন এলাকা হচ্ছে তাদের আস্তানা। তাই পুরো বড় স্টেশন এলাকা হচ্ছে মাদকের স্বর্গরাজ্য। তাদেরকে ছোটখাটো নরমাল কোনো অভিযানে আটক করা যায় না। আটক করতে গেলে তাদের পালিত সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। চাঁদপুরে মাদকের এমন ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও উন্নয়ন সমন্বয় সভায়।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক রোববার হয়েছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা, পরের রোববার তথা গতকাল হয়েছে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা। উভয় সভায় চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম মাদকের বিষয়ে সোচ্চার বক্তব্য রাখেন। তিনি চাঁদপুর শহরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় মাদকের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। সভায় তিনি জানান, চারজন কুখ্যাত মাদক কারবারির হাতে চাঁদপুর শহরের মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ। এরা হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজার ডিলার। এদের অবস্থান হচ্ছে শহরের বড় স্টেশন এলাকায়। সে কারণে পুরো বড় স্টেশন এলাকা এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য। কুখ্যাত এই চার মাদকের ডিলার হলো-মোঃ মিলন ভূঁইয়া (ইয়াবা/গাঁজার ডিলার), ক্লাব রোড, বড় স্টেশন, মোঃ রানা (ইয়াবার ডিলার), লোক কলোনী, বড় স্টেশন, মোঃ আবদুর রহিম (গাঁজা ও ইয়াবার ডিলার), লোক কলোনী, বড় স্টেশন, মোঃ শাহজাহান (ইয়াবার ডিলার), জামতলা। অপর চারজন হলো রাসেল, (ইয়াবার ডিলার), কবরস্থান রোড, পুরানবাজার, মোঃ জসিম মাঝি (ইয়াবার ডিলার), পশ্চিম বিষ্ণুদী, মাঝি বাড়ি, মোঃ জসিম উদদীন মিয়াজি (ইয়াবার ডিলার), নানুপুর, বাগাদী এবং সাদ্দাম ওরফে নেভী সাদ্দাম (ইয়াবা ও গাঁজার ডিলার)। এই আটজনের হাতে চাঁদপুর শহরসহ পুরো সদর উপজেলার মাদকের নিয়ন্ত্রণ। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কমপক্ষে হাফ ডজন করে মাদক মামলা রয়েছে। অনেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও খেটেছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার বর্ণনা হলো : এরা ভয়ংকর ধরনের মাদক ব্যবসায়ী। এদের রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এবং সিন্ডিকেট। বড় স্টেশন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের একাধিকবার আটক করতে গিয়ে তাদের পালিত সন্ত্রাসী এবং তাদের পরিবারের স্বজন নারী-পুরুষের প্রতিরোধের মুখে ফিরে আসতে হয়েছে। ক্লাব রোড এলাকার মিলনের রয়েছে প্রায় পাঁচশ’র মতো মাদক বিক্রির কর্মী বাহিনী। সে এখানে বিলাশবহুল বাড়ি গড়ে তুলেছে। এই মাদক বিক্রির টাকায় তার বিলাসী জীবন-যাপন দেখলে চোক কপালে উঠে যাওয়ার মতো। বড় স্টেশন এলাকার ক্লাব রোড, যমুনা ঘাট এলাকা, নিশি বিল্ডিং এলাকা লোক কলোনী এবং রেলওয়ের পরিত্যক্ত স্থাপনাগুলো হলো তাদের মাদকের আস্তানা। এরা নিজেদের বাসাবাড়িতে রেখেও মাদক বেচাকেনা করে থাকে। এই মাদক বিক্রি করে তারা বহুতল ভবনও গড়ে তোলে। তাদের বিলাসী জীবনযাপন দেখলে কেহ বলবে না তারা মাদক ব্যবসায়ী।
মাদকের এই কর্মকর্তার বক্তব্য হলো-বড় স্টেশন এলাকার এই চারজনসহ সদরের অপর চারজনকে সপরিবারে এই শহর থেকে বিতাড়িত করতে পারলে চাঁদপুর মাদক বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। এ জন্য প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থার সমন্বয়ে বড় ধরনের সাঁড়াশি অভিযান। আর অভিযানের আগাম সংবাদ যেনো তারা কোনোভাবেই জানতে না পারে সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। মাদকের এই সিন্ডিকেটটাকে ধ্বংস করতে না পারলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। মাদক থেকে চাঁদপুরকে রক্ষা করতে হলে এদেরকে দমন করতেই হবে। এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।