ফ্লাইট লেফটেনেন্ট (অবঃ) এ.বি সিদ্দিক কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন তাঁর জীবদ্দশাতেই। অনুকরণীয় জীবনাদর্শ, অনমনীয় ব্যক্তিত্ব ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কারনে। অমায়িক ব্যবহার, মতলবের প্রবাদ পুরুষ এ বি সিদ্দিক ছিলেন নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের প্রেরণা। মানবতার একনিষ্ঠ সেবক, নিঃস্বার্থ জনহিতৈষী।
মতলবের কৃতী সন্তান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ, গণপরিষদ এবং জাতীয় সংসদ সদস্য ফ্লাঃ লেঃ এবি সিদ্দিক চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার মোবারকদি সরকার বাড়িতে ১৯২৯ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন । ২০১২ সালের ৩ সেপ্টম্বর তিনি ঢাকা সি.এমএইচ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এবি সিদ্দিকের পিতার নাম হাসান আলী সরকার, মাতার নাম ফয়জুন নেছা । তিনি অত্যন্ত মধোবী ছাত্র ছিলেন। তিনি মতলব জে,বি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিকুলেশনে মহসীন ষ্টাইপেনডসহ এবং এবং ইন্টার মিডিয়েটে ও অর্নাসে প্রথম শ্রেনীর সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে ডিসটিংশন মার্কসহ ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্স পাস করেন।
মিঃ জিন্নাহ ‘‘উর্দ্দু কেবল উর্দ্দুই পাকিসত্মানের রাষ্ট্র ভাষা হবে’’ ঘোষণা দিলে যে সব ছাত্র তার প্রতিবাদ করে তাদের অন্যতম। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানিয়ন্তন উপাচার্য ডঃ এম হোসেনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান শিক্ষদের সম্মেলনে ‘‘উর্দ্দুকে রাষ্টভাষা’’ হিসাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রচেষ্টাকে কঠোর প্রতিবাদে রহিতকরণ। ১৯৪৮ সালে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে কারাবরন করেন। ১৯৫১ সালে চাঁদপুর মিলাদ-উন-নবী উপলক্ষে সম্মেলনের প্রধান অতিথি মরহুম কবি গোলাম মোসত্মফা ‘‘আরবী, উর্দ্দু, ফারসী ভাষার বহুল অন্তর্ভুক্তি দ্বারা বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ (!) করার প্রয়াস চালালে তার জোড় প্রতিবাদে এবং তার সমর্থকদের দৈহিক আক্রমণ থেকে কোন প্রকার রক্ষা পান।’
নিয়মিত কর্মজীবন শুরুর র্পূবে শিক্ষকতা নিয়ে কিছুদিন থাকলেও পরে ১৯৫১ সালে ক্যাডেট হিসেবে রাজকীয় পাকিস্থান বিমান বাহিনীতে যোগদানের পর ১৯৫২ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। কোয়েটা, কোহাট, রিসালপুর কলেজে (বাঙ্গালী প্রথম এবং শেষ কলেজ এডজুটেন্ট ) কার্যরত থাকার পর ১৯৫৮ সালের শেষ দিকে রিক্রুটিং অফিসার এবং ও সিসি এন্ড এফ হিসাবে চট্রগ্রামের দায়িত্ব গ্রহন করেন। বিমান বাহিনীতে নিজ (চাঁদপুর) এলাকায় প্রায় এক হাজার যুবকের নিয়োগ দান। ১৯৬৪ সালে স্বেচ্ছায় বিমান বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাঙালির স্বার্থ সম্পর্কিত সকল আন্দোলন-কর্মকান্ডে যোগদান। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বৃহত্তম মতলব শাখায় সভাপতি এবং চাঁদপুর মহকুমা (বর্তমান জেলা) আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ (পরবর্তীতে গণ পরিষদ) এর সদস্য নির্বাচিত। স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হলে চাঁদপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) প্রথম ও প্রধান সংগঠক হিসাবে মুক্তিবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ। চাঁদপুরের পতনের পর আগরতলা কেন্দ্রীক দক্ষিন র্পূবাঞ্চলের ডাইরেক্টর রিক্রুটম্যান্ট এন্ড কো-অর্ডিনেশন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রাক্তন সামরিক ব্যক্তি হিসাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখেন। ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগ (মিজান) হতে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে প্রথমে বেসরকারীভাবে র্নিবাচিত ঘোষণা ২ দিন পর ৪টি কেন্দ্রে গন্ডগোলের অজুহাতে পুনঃ র্নিবাচনের মাধ্যমে সরকার দলীয় পার্থীকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। নিজ নির্বাচনী এলাকায় বেশ কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মান করেন, ৩৫ বছর যাবৎ মতলব ডিগ্রী কলেজে গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্য। বরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। মতলবে বিশ্ববিখ্যাত আন্তজার্তিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনে এবং সম্প্রসারণে সক্রিয় এবং অগ্রণী সহযোগিতা করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মতলব থানা শাখা ও চাঁদপুর জেলার শাখার উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, মতলব দক্ষিণ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড এবং কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। মতলবগঞ্জ জে.বি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির উপদেষ্টা। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহনের পুরস্কার স্বরুপ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীহতে উচ্চতরপদ এবং অনুদান প্রদানের প্রস্তাব দিলে স্বধীনতার জন্য যুদ্ধে গিয়েছি দেশ স্বধীন হয়েছে এটাই সর্বোত্তম পুরস্কর উত্তর লিখে উপরোক্ত প্রস্তাব বিনয়ের সহিত প্রত্যাক্ষান করেন। জীবন দর্শন, সৎ-সরল এবং সর্বসত্মরের জনগণের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে জীবন যাবন। আকাঙ্ক্ষাঃ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাঙ্গালীর সার্বিক ‘‘মুক্তি অবলোকন’’।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও, ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।