চাঁদপুর-ঢাকা রুটে সড়কপথের উন্নয়ন, বিভিন্ন পরিবহনে আরামদায়ক যাতায়াত, সময় স্বল্পতা, খরচ কমসহ নানা সুবিধায় যাত্রী ও মালামাল আনা-নেওয়া ক্রমশ বাড়ছে। অপরদিকে অত্যাধুনিক লঞ্চ সার্ভিস চালুর পরও যাত্রী ধরে রাখতে পারছে না লঞ্চগুলো। নানা সঙ্কটের গেঁড়াকলে কমছে চাঁদপুর-ঢাকা নৌপথের যাত্রী চলাচল।
বর্তমানে বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই-গৌরিপুর সড়ক, বাবুরহাট-মতলব শ্রী রায়েরচর হয়ে দাউদকান্দি মেঘনা ব্রিজের পূর্বপাশ দিয়ে ঢাকা যাতায়াতের সড়ক, হাজীগঞ্জ-কচুয়া বিশ্বরোড হয়ে সাচার-গৌরিপুর সড়ক ও শাহরাস্তির কালিয়াপাড়া-কচুয়া-সাচার-গৌরিপুর সড়ক হয়ে রাজধানী ঢাকা যাতায়াত সহজ হয়েছে। তাই এসব রুটে যান চলাচল বেড়েছে কয়েক গুণ। শুধু চাঁদপুর নয়, পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুর জেলার যাত্রীদের একটি বিরাট অংশও এসব সড়ক দিয়ে ঢাকা ও নিজ জেলায় আসা-যাওয়া করছেন। যে কারণে এসব সড়কে সময়ের সুবিধার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাইভেট কারে যাত্রী পরিবহন যেমন বেড়েছে, তেমনি সহজতর হয়ে উঠেছে যাতায়াত সুবিধাও। এ সুবিধায় রয়েছে নানা সড়কে বাস চলাচলও। বর্তমানে এ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়ায় চালিত প্রায় সহস্রাধিক গাড়ি ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করছে বলে জানান চাঁদপুরের রেন্ট-এ কারের মালিক শাহজাহান।
বাবুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী ও এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী সাহাবুদ্দিন গাজী জানান, বর্তমানে ফরিদগঞ্জ এবং চাঁদপুরের ওয়্যারলেস বাজার মোড় ও বাবুরহাট বাজারের মতলব রোড থেকে প্রতিদিন শতাধিক ছোট-বড় এসি/নন-এসি গাড়ি চলাচল করছে। এসব গাড়িতে তিনশ’/চারশ’ টাকায় ঢাকার যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ পর্যন্ত যাতায়াত করা যাচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমানে এসব সড়কে যাত্রীবাহী বাসও চলাচল করছে। কম খরচে এসব বাসে সায়েদাবাদ যেতে সুবিধা হচ্ছে বলে জানান বাসযাত্রী মৈশাদীর হারুন ছৈয়াল।
অপরদিকে নৌপথে ঢাকা-চাঁদপুর রুটে বেশ ক’টি বিলাসবহুল লঞ্চ চালুুর সাথে ভাড়াও বৃদ্ধি করেছে তারা। কিন্তু সেই তুলনায় এই রুটে যাত্রীসেবার মান বাড়েনি একটুও। হঠাৎ হঠাৎ বিভিন্ন লঞ্চের যাত্রা বাতিল, কতিপয় লঞ্চের কেবিনে একই বেডশীট না ধুয়ে কিংবা পরিবর্তন না করে বার বার ব্যবহার, দুর্গন্ধ, কেন্টিনের খাবার মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগানো, যাত্রীসেবার মান নাজুক, যাত্রীর ব্যক্তিগত বা পারিবারিক মালামাল বহনের জন্যে লঞ্চ স্টাফদের চাঁদাবাজি, কুলিদের দৌরাত্ম্য, রাতে চলাচলকারী লঞ্চে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা না থাকা, আনসারদের সমন্বয়ে লঞ্চে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, চাঁদপুর টার্মিনাল ও ঢাকা টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন পরিবহনে ভাড়া বেশি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাসহ নানা ঝুট-ঝামেলায় যাত্রীরা এখন ত্যক্ত-বিরক্ত। তাই লঞ্চে যাত্রী চলাচল ক্রমশ কমছে।
ঢাকা-চাঁদপুর নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে সামগ্রিক সেবার মান পূর্বের চেয়ে কমে যাওয়াতে যাত্রীরা অনেকটা লঞ্চবিমুখ হয়ে পড়ছে বলে জানান ঈগল লঞ্চের যাত্রী পশ্চিম সকদির সোলাইমান পাটোয়ারী। তাছাড়া নৌ-দুর্ঘটনা রোধে পুরানো স্থান থেকে বর্তমান স্থানে লঞ্চঘাট স্থানান্তর, ইচলী লঞ্চঘাট ও চাঁদপুর রকেট ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে। এছাড়া লঞ্চের টাইম-টেবিলে সময়ের সাথে মিলিয়ে না ওঠায় যাত্রীদের অনেকেই এখন লঞ্চের বিকল্প হিসেবে সড়ককেই বেছে নিচ্ছেন।
ঢাকা-চাঁদপুর নৌপথের নানা সমস্যা নিয়ে ইতোমধ্যে ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক মিজান মালিক বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেছেন। তিনি এর সমাধানকল্পে তাদেরকে বেশ কিছু প্রস্তাবনাও দিয়েছেন বলে জানান।
চাঁদপুর-ঢাকা নৌরুটের এমভি প্রিন্স অব রাসেলের চাঁদপুর ঘাট সুপারভাইজার রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, ঘোষেরহাট, পয়সারহাট, রাঙ্গাবালি, তুষখালি, হুলারহাটে তার ৫টি লঞ্চ ছিলো। এগুলো চাঁদপুর ঘাট ধরতো। এসব রুটের লঞ্চ আসা এখন বন্ধ। চাঁদপুর-ঢাকা রুটে এমভি রাসেল লঞ্চটি যাত্রী সংকটে সপ্তাহে ১ দিন চলছে বলে জানান তিনি। এডভেঞ্চার-৫ লঞ্চটি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ছেড়ে যেতো। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত যাত্রী কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়ে ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন যাত্রীবাহী লঞ্চ।
ঈগল ও ময়ূর লঞ্চের চাঁদপুর ঘাট সুপারভাইজার আলী আজগর সরকার জানান, আগের তুলনায় লঞ্চে এখন যাত্রী কমে গেছে। চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়া ঈগল-৩ লঞ্চ ৫/৬শ’ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতো। এখন ২-৩শ’ যাত্রীও হয় না তাদের। অথচ প্রতি ট্রিপে প্রচুর খরচ।
এমভি আব-এ জমজম লঞ্চের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার বলেন, চাঁদপুর-ঢাকা রুটে যাত্রী ভাড়া কমানোর পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বাড়াতে হবে। পাশাপাশি লঞ্চের যাতায়াত সময় কমিয়ে আনলে অবশ্যই এই রুটে যাত্রী বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। তিনি ঢাকায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের এবং চাঁদপুরে জেলা প্রশাসকের সাথে বিভিন্ন সভায় বিষয়টি উত্থাপনও করেছেন বলে জানান। মূলত এখন দ্রুত যাওয়ার জন্যে মানুষ নদীপথ পরিহার করে সড়ক পথকেই বেছে নিয়েছে।
চাঁদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খায়রুল ইসলাম নয়ন জানান, আগে লঞ্চে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। লঞ্চে বর্তমানে ভাড়া বেশি, ঢাকা পৌঁছতে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। রয়েছে সদরঘাট থেকে ট্রাফিক জ্যাম ও পরিবহনে বাড়তি ভাড়া। আর সড়কযোগে বাসে বাবুরহাট থেকে দুই-আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়া যাচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর লঞ্চঘাটের টিআই শাহআলম জানান, সড়কপথের উন্নয়নে যাত্রীরা লঞ্চের চেয়ে সড়ক পথেই যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, সিডিউল অনুযায়ী এক বছর আগেও চাঁদপুর-ঢাকা রুটে ২৭টি, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৪টি ও দক্ষিণাঞ্চল রুটে ৯টি লঞ্চ চলাচল করতো। বর্তমানে চাঁদপুর-ঢাকা রুটে ২০-২২টি, নারায়ণগঞ্জ রুটে ১০-১১টি এবং দক্ষিণাঞ্চলের রূটে ৫টি লঞ্চ চলছে।
চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, চাঁদপুরে আধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক কাজও শুরু হয়ে গেছে। বর্তমান চাঁদপুর লঞ্চঘাটেই হচ্ছে নতুন টার্মিনাল ভবন। তখন অন্যরকম পরিবেশের জন্যে যাত্রীরা নৌপথে যাতায়াতে আগ্রহী হবেন বলে তিনি মনে করেন।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।