ঢাকাবুধবার , ২৬ জুলাই ২০২৩
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আপন আলোয় উদ্ভাসিত
  6. আরো
  7. এক্সক্লুসিভ
  8. কবিতা
  9. কৃষি ও প্রকৃতি
  10. খুলনা
  11. খেলাধুলা
  12. গণমাধ্যম
  13. চট্টগ্রাম
  14. চাকুরি
  15. চাঁদপুর জেলার খবর

যা-ই করতে চান, খুব মনোযোগী হতে হবে : পদার্থবিদ পুরুষোত্তম চক্রবর্তী

রূপসী বাংলা ২৪.কম
জুলাই ২৬, ২০২৩ ৪:০১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী পুরুষোত্তম চক্রবর্তী আয়নিত রশ্মি ব্যবহার করে বিভিন্ন পদার্থ বিশ্লেষণ ও এ-সংক্রান্ত গবেষণা করেন। তিনি ভারতের কলকাতায় অবস্থিত সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিকসের সাবেক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অব প্রিটোরিয়ায় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (Adjunct Professor) হিসেবে কাজ করেছেন। পিএইচডি করেছেন কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিকস থেকে। ১৯৮৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ স্কলারশিপ এবং মুয়াত রৌপ্যপদক দেয়। ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ম্যাস স্পেকট্রোমেট্রি তাঁকে ‘মোস্ট এমিনেন্ট ম্যাস স্পেকট্রোমেট্রিস্ট অব ইন্ডিয়া’ স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া তিনি ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটির ফেলো। পাশাপাশি তিনি বিজ্ঞানচিন্তার লেখক।

ভারতীয় এই পদার্থবিজ্ঞানী এসেছিলেন বিজ্ঞানচিন্তার কার্যালয়ে। তাঁর বাংলাদেশ ভ্রমণ, গবেষণাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার ও সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ–এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটির নির্বাচিত অংশ প্রকাশিত হলো বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য।

বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তায় আপনাকে স্বাগত। প্রথমে জানতে চাই, বাংলাদেশ কেমন লাগছে?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: প্রথমে আপনাদের বিজ্ঞানচিন্তার সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। সত্যি বলতে, বাংলাদেশ আমার খুব ভালো লাগে, সব সময় ভালো লাগে। আমি অতীতে বহু বছর আগে এসেছিলাম, তখনো আমি খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। অনেক বছর পর আবার আসার সুযোগ পেলাম। এবারও একই রকম ভালো লাগছে।

বিজ্ঞানী পুরুষোত্তম চক্রবর্তীপ্রথম আলো ডেস্ক

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি তো চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানবিষয়ক বেশ কয়েকটি আলোচনা ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করলেন। অভিজ্ঞতা বলুন, কেমন লাগল? কী কী বিষয়ে আলোচনা করলেন?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম দুটি বক্তব্য দেওয়ার জন্য। বক্তব্য দুটি আমি দিয়েছি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে একদম বিষয়ের গভীরে চলে গিয়েছিলাম। এটাই আমি করি সব সময়। শিক্ষার্থীদের খুব উদ্বুদ্ধ মনে হয়েছে আমার। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, ফ্যাকাল্টি মেম্বার যাঁরা আমার বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলেন, সবাই খুব আগ্রহী ও উদ্দীপ্ত ছিলেন। কারণ, তাঁরা সবাই আমাকে অনেক প্রশ্ন করছিলেন। সবাই আমার কাছে এসে বলছিলেন, খুব ভালো লেগেছে আমার কাজগুলো। তাঁদের অনেকে আমার সঙ্গে গবেষণাকাজে যুক্ত হতে পারবেন কি না, সেটা জানতে চেয়েছেন। সবার এত আগ্রহ থেকে ধারণা করি, আমার বক্তব্য সম্ভবত সবার ভালো লেগেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি আগে কখনো যাইনি। এবার যাওয়ার সুযোগ পেলাম। বেশ ভালো লেগেছে। ক্যাম্পাস অনেক সুন্দর। শহর ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছি আমি। শহরও ভালো, সুন্দর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে দূরে পাহাড়ঘেরা চমৎকার পরিবেশে। বক্তব্য শেষে আমাকে অনেকটা পথ পেরিয়ে শহরে আসতে হয়েছিল। দুই দিনের মধ্যে কিছু সময় শহর ঘুরে দেখতে পেরেছি। তৃতীয় দিন দুপুর ১২টার ফ্লাইটে আমাকে ঢাকায় পৌঁছাতে হয়।

পরদিন, ১৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে বক্তব্য দিয়েছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার উৎসাহ বেশি ছিল। কারণ, এটি সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে সত্যেন বসু ছিলেন প্রায় ২৬ বছর—১৯২১ থেকে ১৯৪৬/৪৭ পর্যন্ত! যে সত্যেন বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বছর পড়িয়েছেন, তিনি বিভাগীয় প্রধান ছিলেন, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি তাঁর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এসে বক্তব্য দিয়েছি, এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। পরে সত্যেন বসু কলকাতা চলে যান এবং কলকাতায় বাকি জীবন কাটান। কিন্তু জীবনের প্রথম দিকের দিনগুলো সত্যেন বসুর ঢাকাতে কেটেছে; বহু বছর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে বক্তব্য দিয়ে আমার ভালো লেগেছে। আমার মনে হয়েছে, এখানকার শিক্ষার্থীরা অনেক অনুপ্রাণিত।

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ধাতুপৃষ্ঠ থেকে নির্গত সেকেন্ডারি আয়ন নিয়ে। এ বিষয়ে আমাদের বিজ্ঞানচিন্তার তরুণ পাঠকদের জন্য একটু সহজ ভাষায় বলুন।

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: প্রথমে আপনাদের বলে নিই, আমার পিএইচডির বিষয়টিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটা অংশ হলো একটা যন্ত্র তৈরি করা, একদম শুরু থেকে, স্ক্র্যাচ থেকে নতুন ধরনের একটা যন্ত্র তৈরি করা, যেটার সাহায্যে আমি সেকেন্ডারি আয়নগুলো ধরতে পারব বা শনাক্ত করতে পারব। যন্ত্রটা ছিল রেডিওফ্রিকোয়েন্সি কোয়াড্রোপল ম্যাসস্পেকট্রোমিটার, যেটা তৈরি করতে হয়েছে। সাধারণত ম্যাসস্পেকট্রোমিটার ম্যাস বা ভরগুলোকে আলাদা করে। অর্থাৎ সহজ করে বললে, হাইড্রোজেন ও ডিউটেরিয়াম দুটি আইসোটোপ। দুটির ভর আলাদা, তবে পারমাণবিক সংখ্যা একই। কারণ, তারা হাইড্রোজেন। প্রতিটি উপাদানের একটি করে পারমাণবিক সংখ্যা থাকে। এই পারমাণবিক সংখ্যা দিয়ে উপাদানটি কী, তা নির্ধারিত হয়। হাইড্রোজেনের যখন দুটি আইসোটোপ হয়ে গেল, তখন দুটির ভর হয়ে গেল ভিন্ন। এ দুটি ভরযুক্ত একটা আয়নিত রশ্মি যদি সংগ্রহ করি, এতে যেমন হাইড্রোজেন আছে, তেমনি ডিউটেরিয়ামও আছে; তাহলে আমাদের কাজ ওই দুটি আলাদা করা। এই আলাদা করার জন্য আমাদের নিতে হবে ম্যাসস্পেকট্রোমিটার। ম্যাসস্পেকট্রোমিটার মানে ম্যাস বা ভর অনুযায়ী পৃথক হবে আর তারপর আমরা একটি স্পেকট্রাম বা বর্ণালি পাব। যে স্পেকট্রামের মধ্যে বিভিন্ন ম্যাসের একেকটা পিক (সর্বোচ্চ বিন্দু) দেখতে পাব আমরা। অর্থাৎ আমরা এখানে তীব্রতা মাপব আয়নগুলোর ভরের ওপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ হাইড্রোজেন একটা নির্দিষ্ট অংশ ১-এ আসবে, ডিউটেরিয়াম ২-এ আসবে, এ রকম। বা হিলিয়াম ৪-এ আসবে, অক্সিজেন ১৬-তে আসবে। প্রতিটি উপাদানের আইসোটোপ ভিন্ন ভিন্ন ম্যাসে আসবে। তাই আমরা স্পেকট্রাম পাই, যা ম্যাসস্পেকট্রাম। যেমন বর্ণালি হয় আলোর ক্ষেত্রে, তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলাদা করে, তেমনি এ ক্ষেত্রে ম্যাসস্পেকট্রাম।

এই ম্যাসস্পেকট্রামে আমি যা তৈরি করেছি, এটা তার একটা অংশ ছিল। আরেকটা অংশ হলো সেকেন্ডারি আয়ন নির্গমন। অর্থাৎ আয়নকে যদি কোনো ধাতুর পৃষ্ঠতলের ওপরে নিক্ষেপ করা হয়, আয়নটি তখন ভেতরে চলে যায়। আয়নটি শক্তি হারাতে হারাতে কোনো এক প্রান্তে গিয়ে থেমে যায়। আয়নটি কিন্তু মুক্তভাবে চলতে পারবে না, আয়নটির মধ্যে অসংখ্য পরমাণু আছে, আয়নটি পরমাণুগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খাবে। একটা পরমাণুর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া বা সংঘর্ষ হওয়াকে আমি বলব প্রাইমারি সংঘর্ষ, এরপর আরেকটা সংঘর্ষ হতে পারে, যেটাকে আমরা বলব সেকেন্ডারি সংঘর্ষ। এভাবে একাধিক অনেক সংঘর্ষ সৃষ্টি হবে এবং একটি একক আয়ন যখন পৃষ্ঠতলের ওপরে এসে নিক্ষিপ্ত হয়, সেটা কিন্তু লক্ষাধিক সংঘর্ষ ঘটাতে পারে। এই সংঘর্ষ প্রকৃতপক্ষে নিচ থেকে ওপরে যায়। এটাকে আমরা সংঘর্ষ ক্যাসকেট বলতে পারি। এর ফলে পৃষ্ঠতলের একদম উপরিভাগে থাকা পরমাণুগুলো ক্যাসকেট থেকে কিছু শক্তি সংগ্রহ করে। যদি সেই শক্তি পৃষ্ঠতলের বাইন্ডিং এনার্জি থেকে বেশি হয়, পৃষ্ঠতল থেকে শক্তিগুলো ছিটকে বাইরে বেরিয়ে আসবে এবং সেই বেশির ভাগ কণা নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু খুব অল্প পরিমাণ, ০.০১ শতাংশ আয়ন থাকে। এগুলোকে আমরা সেকেন্ডারি আয়ন বলব।

ম্যাসস্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করে আমরা এই সেকেন্ডারি আয়নগুলোকে পরিমাপ করতে পারি, বিভিন্ন উপায়ে বিশ্লেষণ করতে পারি। সেকেন্ডারি আয়নের এই পরিমাপ থেকে আমরা একটা উপাদানের মধ্যে কোন উপাদান কতটা আছে, তা বুঝতে পারি। অর্থাৎ যদি সিলিকনের মধ্যে কোনো কার্বন কোথাও ডোপ হয়ে থাকে, কতটা পরিমাণ কার্বন গেঁথে আছে ভেতরে, কোন জায়গায় কতটুকু আছে, সবকিছু আমরা সঠিকভাবে মাপতে পারি।

বিজ্ঞানচিন্তা হাতে বিজ্ঞানী পুরুষোত্তম চক্রবর্তীপ্রথম আলো ডেস্ক

বিজ্ঞানচিন্তা: সর্বসাধারণের জন্য এটার কি কোনো সাধারণ ব্যবহারিক দিক আছে?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: হ্যাঁ, অবশ্যই ব্যবহারিক দিক আছে। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে এটার ব্যবহার অপরিসীম। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে সিলিকন হচ্ছে প্রধান উপাদান। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বইয়ে পড়ে, সিলিকনের মধ্যে যদি ইন্ডিয়াম ডোপ করা হয়, তাহলে তা হয়ে ওঠে পি টাইপ সেমিকন্ডাক্টর। আর যদি আর্সেনিক বা ফসফরাস ডোপ করা হয়, তাহলে হয় এন টাইপ। এই ডোপিংগুলো সরাসরি বা রাসায়নিকভাবে বা কখনো ব্যান্ড গ্যাপ পরিবর্তন করে করা হয়, যেটাকে আমরা ব্যান্ড গ্যাপ ইঞ্জিনিয়ারিং বলি। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ব্যান্ড গ্যাপ পরিবর্তন করা খুবই জরুরি। আমরা কিন্তু কোন উপাদান কতটুকু ডোপ করব, তার ওপর ভিত্তি করে আমাদের ইচ্ছেমতো ব্যান্ড গ্যাপ পরিবর্তন করতে পারি। ন্যানো প্রযুক্তিতেও এটা আমরা ব্যবহার করতে পারি। ন্যানোস্ট্রাকচারের রাসায়নিক গঠন বুঝতে এটি কাজে লাগে।

বিজ্ঞানচিন্তা: বর্তমানে কী নিয়ে গবেষণা করছেন?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: বর্তমানে আমি এ বিষয়ে তো কাজ করছিই, পাশাপাশি এ মুহূর্তে আমি নন-লিনিয়ার অপটিকসের কিছু কাজ করছি, ফটোনিকসের কাজ করছি এবং আমরা কোয়ান্টাম ডট তৈরি করছি।

বিজ্ঞানচিন্তা: ফটোনিকসের প্রায়োগিক দিক নিয়ে বলুন।

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: ফটোনিকস হলো নন-লিনিয়ার অপটিকস। আমরা সাধারণত লিনিয়ার অপটিকসের সঙ্গে পরিচিত। আলোক তীব্রতা হলো ফোটনের সংখ্যা। আলোক তীব্রতা প্রতিসারঙ্কের ওপর নির্ভর করে না। প্রতিসারঙ্কের পরিবর্তন হয় শুধু তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা। প্রিজম দিয়ে আমরা আলোকে বর্ণালিতে ভেঙে ফেলতে পারি। লিনিয়ারের ক্ষেত্রে এসব হয়। নন-লিনিয়ারের ক্ষেত্রে আলোক তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। ফটোনিকসের ব্যবহারে আমাদের ইলেকট্রনের কোনো ব্যবহার নেই। প্রতিসারঙ্ক পরিবর্তন হচ্ছে শুধু আলোক তীব্রতার ওপরে। ফলে প্রতিসরাঙ্ক এত দ্রুত পরিবর্তত হচ্ছে। ফটোনিকস নিয়ে এখনো অনেক কাজ চলছে। ফটোনিকস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে কঠিন ছিল ফটোনিকস উপাদান তৈরি করা। আমরা ১০-১৫ বছর পর হয়তো দেখব অপটিক্যাল কম্পিউটিং শুরু হয়েছে, সেখানে আর কোনো ইলেকট্রনিকস থাকবে না। ফটোনিকস উপাদান আবিষ্কৃত হয়ে গেলে অনেক এগিয়ে যেতে পারব আমরা। এটা হচ্ছে আমার বর্তমান কাজ যে নন-লিনিয়ার অপটিক্যাল ফেনোমিনা অব কোয়ান্টাম ডটস ইন দ্য গ্লাসেস।

বিজ্ঞানচিন্তা: দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের কাজ করা কঠিন। আপনি যখন কাজ শুরু করেছিলেন, তখন সুযোগ-সুবিধা অনেক কম ছিল। তাহলে আপনি এই যে আয়নিত রশ্মি নিয়ে কাজ করবেন, এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলেন কীভাবে?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: যখন গবেষণা করতে শুরু করলাম, তখন আমি জানতাম না যে কোন বিষয়ে কাজ করব। এটা নির্ভর করে সুপারভাইজারের ওপর, তিনি কোন বিষয়ে কাজটি দেবেন, তার ওপর। যখন আমি ম্যাসস্পেকট্রোমিটার তৈরি করছিলাম, তখন থেকে আমার আয়ন বিম নিয়ে কাজ করা শুরু হয়ে গেছে। আমি নেদারল্যান্ডসে ছিলাম, সেখানে আমি অপটিক্যাল কোটিংসে কাজ করেছি। হল্যান্ডের ফিলিপস ল্যাবরেটরির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে আমরা সফলভাবে অপটিক্যাল কোটিং করতে পেরেছিলাম। অনেক বছর পর আমি ইতালি গিয়ে পাদোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে নন-লিনিয়ার অপটিকসের কাজ শুরু করি। সেখানে আমার আয়ন বিম নিয়ে কাজ করা হয়েছে। ওখানে জানলাম যে গ্লাসের মধ্যে যদি বিভিন্ন উপাদান আয়ন হিসেবে গেঁথে দেওয়া যায় এবং যদি অ্যানিল করা যায়, তবে কোয়ান্টাম ডট গঠন করে বা জিরো ডাইমেনশনাল ন্যানোস্ট্রাকচার গঠন করে। কলকাতা সাহা ইনস্টিটিউটে ফিরে আসার পর আমি আমার সেই কাজ চালিয়ে যাই। তত দিনে আমাদের সাহা ইনস্টিটিউটে ডেনমার্ক থেকে ২০০ কিলো ইলেকট্রন ভোল্টের আয়ন এক্সিলারেটর যন্ত্র এসে গেছে।

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা করবেন, এ সিদ্ধান্ত নিলেন কবে?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: আমি পদার্থবিজ্ঞানে পড়ব, এটা আগে থেকে ঠিক করা ছিল না। আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন আমি ভেবেছিলাম যে আমি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ব। এটা আমার স্বপ্ন ছিল। আমি অনেক ভালো ইংরেজি লিখতে পারতাম, এটাতে আমার বাবার অনেক অবদান আছে। কারণ, আমার বাবা আমাকে ইংরেজির বেসিক শিখিয়েছিলেন। স্কুলে আমি পদার্থবিজ্ঞানে এত ভালো ছিলাম না। এমনকি নবম শ্রেণিতে একবার পদার্থবিজ্ঞানে অকৃতকার্য হয়েছিলাম। আমি যখন একাদশ শ্রেণিতে, তখন আমার বাবা একজন গৃহশিক্ষক ঠিক করে দিলেন। তিনিই আমাকে পদার্থবিজ্ঞানের ভীতি দূর করতে সাহায্য করেছিলেন। পদার্থবিজ্ঞান যে মজা করে পড়ার বিষয়, আমাকে বুঝিয়েছিলেন তিনি। আমি বুঝতে পারলাম যে আমি যদি বেসিক গাণিতিক জ্ঞানসম্পন্ন হই এবং পদার্থবিজ্ঞান বুঝে পড়ি, তবে সহজে পদার্থবিজ্ঞানের গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারব। গণিতে আমি অনেক ভালো ছিলাম। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় আমি গণিতে ২০০-তে ১৯৯ পেয়েছিলাম। পদার্থবিজ্ঞানেও লেটার পেয়েছিলাম। এরপর আমার ইচ্ছা হলো যে আমি কলকাতায় গিয়ে ভালো কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকে ভর্তি হব। তখন থেকে আমার মাথায় এসেছিল, আমাকে পদার্থবিদ হতে হবে। আমি যে বিজ্ঞানী হব, সেটা আমি ভাবিনি। পদার্থবিজ্ঞান ভালোবেসে পড়তেই আমি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করলাম। এরপর যুক্ত হলাম গবেষণায়। এসব কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগল। সেই ভালো লাগা এত তীব্র হলো যে পদার্থবিজ্ঞান আমার জীবনের মতো ভালো লাগে।

বিজ্ঞানচিন্তা: যারা ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, তাদের কোন বিষয়টি চর্চা করা উচিত বা কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: পদার্থবিজ্ঞান পড়ার পর কেউ যদি এ বিষয়ে গবেষণা করতে চায়, তবে শুরু থেকে তাত্ত্বিক বিষয়গুলো খুব বুঝে পড়তে হবে। বিষয়গুলো অনেক গভীর থেকে জানতে হবে। বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করতে হবে। গণিতে খুবই ভালো হতে হবে। পদার্থবিজ্ঞানে বেসিক খুব ভালো হতে হবে।

বিজ্ঞানচিন্তা: বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চার সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: আমি তো বাংলাদেশ বিষয়ে এখনো খুব বেশি জানি না। তবে এই কয় দিন চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যেমন দেখলাম; বুঝলাম, পদার্থবিজ্ঞানে বেশ কিছু তাত্ত্বিক কাজ হচ্ছে। তবে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো এক্সপেরিমেন্টাল বা প্রায়োগিক গবেষণা হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব উৎসাহী। তারা জানতে চায়, বুঝতে চায়, কাজ করতে চায়। এসব দেখে আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চার সম্ভাবনা বেশ ভালো।

বিজ্ঞানচিন্তা: এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। আপনি কি গল্পের বই বা উপন্যাস পড়েন?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র (চট্টোপাধ্যায়), শরতের (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) লেখা পড়ি। তবে এখন এত সময় পাই না। কারণ, মোবাইলের যুগে সময় পেলে মোবাইলই ঘাঁটাঘাঁটি করা হয়। এটা একটা বদভ্যাস। এত সুন্দর সুন্দর গল্প-উপন্যাস থাকতে তরুণ প্রজন্ম বা আমরা মোবাইলে অনেক সময় নষ্ট করি। এটা প্রযুক্তির একটা খারাপ দিক।

বিজ্ঞানচিন্তা: পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আমাদের কী করা উচিত? কিংবা প্রযুক্তিনির্ভরতা বা মোবাইল আসক্তি কমানোর জন্য কী করা উচিত?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: পরিবারকে সতর্ক হতে হবে। শিশুদের হাতে মোবাইল দেওয়া যাবে না। কিশোরদেরও সহনীয়ভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে হবে। বই কিনে দেওয়া বা হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে বই পড়তে উৎসাহিত করতে হবে।

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার পছন্দের বই কোনটি?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ।

বিজ্ঞানচিন্তা: অবসরে কী করেন?

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: ইদানীং লেখালেখি করছি। দুই বছর ধরে বড় কিছু কাজ করছি। আমি এনসাইক্লোপিডিয়া অব ম্যাটেরিয়ালস সম্পাদনা করছি, যেটা এলসিভিয়ার (যুক্তরাষ্ট্র) প্রকাশ করবে। ন্যানোম্যাটেরিয়ালসের আরেকটা বই আমি সম্পাদনা করছি, যেটা জার্মানি থেকে প্রকাশ করবে স্প্রিঙ্গার। এই বইগুলো সম্পাদনা করতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস নিই। তা ছাড়া প্রচুর ডক্টরাল থিসিস আসে, সেগুলো পরীক্ষা করতে হয়। আবার আমি দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, সেখানে আমাকে মাঝেমধ্যে ক্লাস নিতে হয়। কখনো অনলাইনে, কখনো সরাসরি গিয়ে। বিভিন্নভাবে সময় কেটে যাচ্ছে আরকি।

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার পরিবার সম্পর্কে বলুন।

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: আমার স্ত্রী আছেন। স্কুলে পড়াতেন এত দিন, সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। খুব নামকরা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে তিনি বাংলা সাহিত্য পড়াতেন। আমার স্ত্রী গানেও খুব ভালো, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। আর আমার একটি ছেলে আছে। ছেলেটি ম্যাস কমিউনিকেশনসে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে সে একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কর্মরত। ছেলের স্ত্রী এখন কিছু করছে না, তবে তার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে কিছু করার। সে-ও ব্যবসায় শিক্ষায় পড়েছে, বেশ বুদ্ধিমতী মেয়ে। এখন একটু সংসারে মন দিয়েছে। আমার ছেলের বউ আমাদের সবারই খুব প্রিয়। আপনি ছেলে হোন বা মেয়ে, সংসারী হোন বা বাইরে কাজ করেন, পড়াশোনা ঠিক করে করতে হবে। তারপর নিজের পছন্দমতো কাজ করা, পরিবারের খেয়াল রাখা, এ–ই তো।

বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: আমি বলব, মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এখনকার প্রজন্মের মধ্যে এই বিষয়ের অভাব দেখি। আরেকটা বিষয় হলো, আপনি যা-ই করতে চান, খুব মনোযোগী হতে হবে, বিক্ষিপ্ত হওয়া যাবে না।

বিজ্ঞানচিন্তা : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। আমাদের পাঠকেরা আশা করি অনেক অনুপ্রাণিত ও উপকৃত হবেন।

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী: আপনাদেরও ধন্যবাদ। বিজ্ঞানচিন্তার মতো একটা স্বনামধন্য বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছি। এখানে এসে আমার ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে কখনো কোনো অনুষ্ঠানে আবার সুযোগ হলে চলে আসার চেষ্টা করব।

অনুলিখন : মুশফিকুর প্রিয়, শিক্ষার্থী, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

* সাক্ষাৎকারটি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে বিজ্ঞানচিন্তার কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।

%d bloggers like this: