দলীয় প্রতীক ও প্রভাবমুক্ত উপজেলা নির্বাচন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷ সেজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের স্বজনরা এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেয় দল। এই ইস্যুতে দল কঠোর অবস্থানে যাবে বলেও বার্তা দেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত অনেকটা নীরবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে ক্ষমতাসীনরা। কঠোর বার্তা দিয়েও এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের অনেককে ভোট থেকে নিবৃত করতে পারেনি দল। ফলে এই বিষয়টি আর নতুন করে সামনে আনছে না আওয়ামী লীগ।
গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদের অনেকেই নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানায় আওয়ামী লীগ। দলের সেই ভাবনায় অনেকের দ্বিমত থাকলেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনেই ব্যক্তিগতভাবে ভোটের প্রস্তুতি নিতে থাকেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
এর মধ্যেই উপজেলা নির্বাচন ঘিরে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানায় ক্ষমতাসীন দল। দলীয় প্রধানের বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, কোনো এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। কেউ প্রার্থী হলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে ইতোমধ্যে মন্ত্রী-এমপিদের অনেকের স্বজনরা ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে একটি বড় অংশকে থামানো যায়নি। তারা ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনড় রয়েছেন। খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাইও চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এই ইস্যুতে অনেকটা বেকায়দায় পড়ে আওয়ামী লীগ নতুন করে আর কোনো কঠোরতা দেখাচ্ছে না। অনেকের মতে, আওয়ামী লীগ নীরবে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও বের হয়- কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থিতা নিয়ে জোরালো আলোচনা হবে। অনেক এমপি-মন্ত্রী এর জন্য দলীয় শাস্তির মুখে পড়তে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল।
কিন্তু সভা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, সভায় উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থিতা ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাদানুবাদ হতে পারে সেই ভয়ে বিষয়টি আলোচনায় আনা হয়নি।
দলীয় সিদ্ধান্তের পর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালকসহ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। তবে আলোচিত অনেক নেতার স্বজনরা অনড় থাকেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে ক্ষমতাসীন দল। ফলে বিষয়টি নিয়ে আপাতত চুপ থাকার নীতি গ্রহণ করে।
সবশেষ ভোটের লড়াইয়ে নাম লেখিয়েছেন খোদ ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন ওরফে শাহাদাত কাদের। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে মাহাবুবুর রশীদ মঞ্জুও।
এই ব্যাপারে শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে প্রশ্নের মুখে পড়েন ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বিষয়টি নিয়ে নতুন এক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আমার একজন স্বজনও উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, আমাদের সমর্থন আছে কি না। আমি তার পক্ষে প্রশাসন বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে কি না সেটাই সেটাই দেখার বিষয়।’ যদিও সিদ্ধান্তের কথা জানানোর সময় এই ব্যাখ্যা দেননি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
উপজেলা নির্বাচনে অনেকেই দলের নির্দেশনা মানেনি, তাদের বিষয়ে দল কী ব্যবস্থা নেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেকেই এর মধ্যে প্রত্যাহার করতে শুরু করেছেন। আমাদের কয়েকজন আগেই প্রত্যাহার করেছেন। আমাদের গোলাম দস্তগীরের ছেলে প্রত্যাহার করেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, ভাই হোক, স্বজন হোক আমি তাকে দাঁড় করিয়েছি কি না। আমি তার পক্ষে সমর্থন দিচ্ছি কি না, আমার দল সমর্থন দিচ্ছে কি না সেটা হচ্ছে বড় কথা। আমি বা আমার দল যদি পক্ষে না থাকে তাহলে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বিষয়ে জড়িত নেই।’
এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষ্য, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের যে স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের জন্য দলের কোনো আলাদা নির্দেশনা নেই। দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচন উন্মুক্ত। ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ঢাকা মেইলকে জানান, দলের পক্ষ থেকে এমপি-মন্ত্রীদের বিশেষ কোনো সুবিধা নেই, কোনো নির্দেশনাও নেই। আহমেদ হোসেন বলেন, ‘তাদের (এমপি-মন্ত্রীদের স্বজন) ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। স্বজন বলতে অনেক কিছু বোঝায়। হাজারো মানুষ স্বজন হতে পারে৷ তারা নির্বাচন করতে পারবে না কেন? পারবে। এতে কোনো সমস্যা নাই। তাদের জন্য কোনো নির্দেশনাও নেই।’
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।