আসছে বছর আবার দেখা হবে এই প্রত্যাশা নিয়ে, দেবী কাঠামো বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবে ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার ছিল বিজয়া দশমী। অর্থাৎ শেষদিন। এদিন সকালে দশমী বিহিত পূজা শেষে পূজা মণ্ডপে বেজে উঠে বিষাদের সুর। সকালেই পূজা মণ্ডপে পণ্ডিত পুরোহিতগণ ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে, মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে দেবী বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন করেন। এ সময় ভক্তদের নয়ন অশ্রুসজল হয়ে উঠে। তারা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। পূজা মণ্ডপে দেখা দেয় বিষাদের ছায়া। সন্ধ্যার পূর্ব থেকেই পূজারীগণ প্রস্তুতি নিতে থাকেন দেবী কাঠামো বিসর্জনের জন্যে। দুপুরের পর থেকে নারীরা ভিড় জমাতে থাকেন পূজা মণ্ডপে, আবার এসো মা ধরাধামে, দেখা হবে আবার একটি বছর পরে এমনি করে প্রার্থনা করেন দেবী চরণে। নারীগণ ভক্তি-শ্রদ্ধা সহকারে সিঁদুর পরিয়ে রাঙ্গিয়ে দেন মায়ের ললাট। তারা নিজেরাও দেবী মায়ের সিঁদুরে নিজেদের রাঙ্গিয়ে নেন। সিঁদুর আভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠে দেবীর মুখমণ্ডল। ভক্ত নর-নারী শেষবারের মত মাতৃরূপ দর্শন করেন গভীর একাগ্রতা নিয়ে। কামনা করেন নিজেদের সুখ-শান্তি আর ঐশ্বর্য, কামনা করেন দেশ ও জাতির মঙ্গল। এদিন সন্ধ্যার পর শুরু হয় বিসর্জন পর্ব। চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত পূজা মণ্ডপের কয়েকটি দেবী প্রতিমার কাঠামো বিসর্জন দেয়া হয় চৌধুরী ঘাট এলাকা দিয়ে (১০নং ঘাটে)। এ স্থান দিয়ে বিসর্জন পর্ব সুসস্পন্নে চাঁদপুর পৌরসভা বিশেষ ব্যবস্থাগ্রহণ করে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে বিসর্জন পর্বস্থলে নির্মাণ করা হয় সুসজ্জিত মঞ্চ। বিসর্জন স্থলের উঁচুস্থানে স্থাপন করা হয় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর (বড় পর্দা)। যার মাধ্যমে দর্শনার্থীগণ অনায়াসে বিসর্জন পর্ব দেখতে পেয়েছেন বিসর্জনস্থলের দূরে দাঁড়িয়ে। আবার অনেকেই বিসর্জন পর্ব স্থলে স্থাপিত মঞ্চে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’ এই কথাটি স্মরণে রেখে শেষ মুহূর্তের বিদায় পর্ব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাও ছিল যথেষ্ট প্রশংসনীয়। তারা বিসর্জন পর্বের অনেক আগ থেকেই বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ করেন। এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিসর্জন পর্ব সম্পন্নে জেলা, উপজেলা ও পৌর পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দও ছিল তৎপর। সকলের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও ভিন্ন সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয় শারদীয় দুর্গোৎসবের বিসর্জন পর্ব। তবে শহরের কয়েকটি প্রতিমা মণ্ডপেই থেকে যায়। থেকে যাওয়া এ সকল দুর্গা প্রতিমা আবার আসছে বছর দুর্গা পূজার আগ মুহূর্তে বিসর্জন দেয়া হবে বলে জানা যায়। শহরের কুণ্ডের বাড়ি, মজুমদার বাড়ি, পুরাণবাজার দাসপাড়া দুর্গাপূজা মণ্ডপ, হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্সের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়নি। প্রতিদিনই এ সকল স্থানে অবস্থিত দেবী দুর্গার নিয়মিত পূজা অর্চনা হবে বলে জানা যায়। চৌধুরী ঘাট এলাকা ছাড়াও এদিন সন্ধ্যা রাতের পর সুবিধাজনক স্থানে পূজারীগণ তাদের প্রতিমা বিসর্জন দেন। সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলায় ২২৪টি পূজা মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ৪০টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর পৌর এলাকায়ই হয়েছে ৩৪টি পূজা মণ্ডপ। কোনো কোনো পূজা মণ্ডপে রাত ১২টা অবধি বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন হতে দেখা যায়। তবে বিসর্জন পর্বে দেখা যায়নি বিষাদের ছায়া। উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দ উৎসাহের মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয় দেবী কাঠামো বিসর্জন পর্ব।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি মন্দির চত্বর হতে শুরু হয় বিসর্জন পর্বের শোভাযাত্রা। কালীবাড়ি মন্দিরের পূজারীগণ বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে এই শোভাযাত্রা বের করেন। এ সময় চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা-হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী (পিপি), জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মধু পোদ্দারসহ দুলাল রায়, গোবিন্দ সাহা, সঞ্জিত পোদ্দার, প্রবীর পোদ্দার, অমল রক্ষিত মনা, অ্যাডঃ প্রভাষ সাহা, নির্মল পালসহ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের নেতৃবৃন্দ ও সুধীজনের ব্যাপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। এ সময় শত শত নরনারী উৎসবমুখর পরিবেশে রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের বিদায় মুহূর্তের শোভাযাত্রা অবলোকন করেন।
বিসর্জন পর্বে কালীবাড়ি মন্দির, পালপাড়া শীতলামায়ের মন্দির, গোপাল জিউড় আখড়াসহ কয়েকটি পূজা মণ্ডপের পূজারীগণ প্রতিমাসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক অতিক্রম শেষে চৌধুরী ঘাটলাস্থ বিসর্জন স্থলে গিয়ে উপস্থিত হন। এখানেই উৎসবমুখর পরিবেশে ডাকাতিয়া নদীতে বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন হয়। বিসর্জন পর্বের পূর্বে এ স্থানে প্রথমবারের মত পুলিশ সুপারের দেয়া উপহার কেক কেটে বিসর্জন পর্বের উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম পিপিএম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শেখ মুহসীন আলম, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, সহ-সভাপতি পরেশ মালাকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল সাহা, পৌর মহিলা কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াস, পৌর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি নেপাল সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুমন সরকার জয়সহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের নেতৃবৃন্দসহ সুধীজন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন হওয়ায় জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আগামীতে এমনি করে ধর্মীয় সকল সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।